বর্তমান সময়ে আমরা দিনের শুরু থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আমাদের জীবনের পরতে পরতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলছি। প্রযুক্তির সাথে সাথে যেন আমাদের জীবনের চাহিদাগুলোও বেড়ে যাচ্ছে এবং সাথে আমরা কেমন যেন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। প্রতিটি কাজের জন্যেই এখন আমাদের নির্ভর হতে হচ্ছে কোন না কোন প্রযুক্তি পণ্যের উপর।
আমাদের জীবনে নিত্যদিন কাজে আসা এরকম এক নির্ভরশীল ডিভাইস হচ্ছে ট্যাব। পোর্টেবল এই ডিভাইসটি আমাদের জীবনকে কিছুটা হলেও করেছে সহজ, পাশাপাশি যান্ত্রিকতাতেও বেঁধে দিচ্ছে কিছুটা হলেও। যাই হোক, প্রযুক্তি বাজার ঘুরলে বিভিন্ন দামে বিভিন্ন রকমের ট্যাব দেখতে পাবেন আপনি। হরেক রকম মূল্যের এই ট্যাবগুলোর স্পেসিফিকেশনও নির্ভর করে মূল্যের উপরেই। এখন যেহেতু আমাদের সমাজে সবাই বেশি টাকা খরচ করে হাই-কনফিগারেশনের ট্যাব কিনতে পারে না সেহেতু অনেকেই কম মূল্যে সস্তা ট্যাব কিনে থাকেন। কিন্তু, অনেকের প্রয়োজন হবার পরেও সস্তা এসব ট্যাবের উপর আস্থা রাখতে পারেন না। আর আজকের এই ব্লগটি মূলত তাদের জন্যেই। আজ আমি আপনাদের এমন কিছু ফ্যাক্ট জানাবো যা একটি সস্তা ট্যাব কেনার আগে বা কেনার সময় আপনার মাথায় রাখা উচিৎ। চলুন তাহলে, শুরু করা যাক।
গুগল প্লে স্টোর প্রি-ইনস্টল করা আছে কিনা দেখে কিনুন
সস্তা ট্যাবলেটগুলোতে স্পেসিফিকেশন কিছুটা কম থাকবে এটা স্বাভাবিক, কিন্তু তাই বলে গুগলের অ্যাপলিকেশনগুলো থাকবে না সেটা কি মানা যায়? অনেক কম মূল্যের ট্যাবেই গুগলের প্রয়োজনীয় ফিচার সমূহ যেমন, জিমেইল, গুগল সার্চ, গুগল ক্যালেন্ডার ইত্যাদি থাকে না। ভাবছেন, ‘ডাউনলোড করে নিলেই তো হলো?!’ ভুল ভাবছেন! কেননা, গুগলের প্রোডাক্টের মধ্যে গুগল প্লে স্টোরও পড়ে। আর গুগল প্লে স্টোর না থাকা মানে আনঅফিসিয়াল থার্ড পার্টি স্টোরগুলো থেকে অ্যাপলিকেশন ইনস্টল করা যা প্রায় অনেক দিক দিয়েই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই, চেষ্টা করবেন অন্তত গুগল প্লে সহ গুগলের সকল সেবা সাপোর্ট করে থাকে এমন একটি ট্যাব কিনতে।
‘সস্তা ট্যাব মানেই স্লো!’ একটি ভুল ধারণা
অনেকেই কোন এক অদ্ভুত কারণে মনে করে থাকেন ‘যেহেতু ট্যাবটির দাম কম, সেহেতু সেটা স্লো!’ কিন্তু কেন? সেটা হওয়াটা কি আবশ্যকতার পর্যায়ে পড়ে? আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি যখন কিনা প্রযুক্তির খরচকে অপটিমাইজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তাহলে কেন আমরা কম দামে ফাস্ট ট্যাব পাবো না বলুন তো?
উদাহরণ টানছি, আসুসের মেমো প্যাড ৮ ডিভাইসটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১.৩৩ গিগাহার্জ গতি বিশিষ্ট ইন্টেল অ্যাটম জেড৩৭৪৫ প্রসেসর এবং ১ গিগাবাইট র্যাম এবং অন্যদিকে এসারের আইকনিয়া ট্যাবে দেয়া হয়েছে ইন্টেল অ্যাটম জেড৩৭৪৫জি’র ১.৮৩ গিগাহার্জ গতি বিশিষ্ট কোয়াড কোর প্রসেসর এবং ২ গিগাবাইট র্যাম। স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী এবং পারফর্মেন্স অনুযায়ী ট্যাবগুলোর মূল্য অনেক কম!
আমাদের দেশের বাজারে অনেক ট্যাবই আছে যেগুলোর কথাও আমি লিখতে পারতাম কিন্তু আমি যে ডিভাইস দুটির কথা উল্লেখ করেছি সেগুলোতে পরিচিত প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু এরপরেও কিন্তু এগুলোর দাম বেশ কম।
ডিসপ্লের মান নিয়ে একটু ঘাঁটুন
স্বল্প মূল্যের ট্যাবগুলোতে ডিসপ্লে কোয়ালিটির দিকে আপনাকে একটু ছাড় দিতেই হবে। কেননা, স্বাভাবিক ভাবেই ভালো ডিসপ্লে প্যানেলের মূল্য কিছুটা বেশিই হবে এবং ফলে ট্যাবের মূল্যও বৃদ্ধি পাবে। তবে আপনি আমাকে একটি প্রশ্নের উত্তর দিন, ‘কেন আপনার আহামরি একটি ডিসপ্লে প্যানেল দরকার?’ ট্যাবে একটি ডিসেন্ট এবং ভালো ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল সম্বলিত ডিসপ্লের জন্য কখনোই হাই রেজ্যুলেশনের ডিসপ্লে প্যানেলের দরকার নেই। আর শুধুমাত্র হাই রেজ্যুলেশনই ডিসপ্লে প্যানেলের মান নির্ধারন করেনা। রেজ্যুলেশনের পাশাপাশি কনট্রাস্ট, ব্রাইটনেস, কালার রিপ্রোডাকশনও একটি ভালো মানের ডিসপ্লে প্যানেলের জন্য জরুরী।
তবে ট্যাবলেট কেনার আগে ডিসপ্লে প্যানেল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবেন। কম দামি কিছু ট্যাবলেটেও ডিসেন্ট ডিসপ্লে প্যানেল থাকে।
আপডেট পাবেন না বললেই চলে
কম মূল্যের ট্যাবগুলোতে এই একটি সমস্যাই প্রধান হিসেবে বলে আমার কাছে মনে হয়। ট্যাবগুলোতে এর অপারেটিং সিস্টেমের ফার্মওয়্যার আপডেট পাওয়া যায় না বললেই চলে। তাই আপনি যদি একটি ট্যাব কিনে থাকেন যার অপারেটিং সিস্টেম আন্ড্রয়েড জেলিবিন তাহলে সেটি শেষ পর্যন্ত হয়তো জেলিবিনই থেকে যাবে। ফলে, পুরাতন ফার্মওয়্যারেই বন্দী থাকতে হবে আপনাকে।
ব্যাটারি লাইফ
স্মার্ট ডিভাইসগুলোতে যদি কোন কমন সমস্যা থেকে থাকে তবে সম্ভবত এর ব্যাটারি লাইফই হবে। আর কম মূল্যের ট্যাবগুলোতে এই সমস্যা আরও বেশি হয়ে থাকে।
এমনিতেই ট্যাবের স্ক্রিনের আঁকার কিছুটা বড় হবার কারণে এতে ব্যাটারি খরচও হয় কিছুটা বেশিই, তার উপর কম ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি কম মূল্যের ট্যবগুলোতে দেয়ার কারণে ট্যাবগুলোর পারফর্মেন্স কমে যায় বেশ খানিকটা। তাই কেনার আগে চেষ্টা করবেন কিছুটা হলেও বেশি ক্ষমতা যুক্ত ব্যাটারি আছে এমন ট্যাব কেনা। এক্ষেত্রে হয়তো আপনাকে প্রসেসর ছাড় দিতে হতে পারে তবে আশা করি গেম না খেললে কোয়াড কোরের স্থানে ডুয়াল কোরে খুব বেশি সমস্যা হবেনা আপনার।
ব্র্যান্ডের দিকে একটু খেয়াল রাখুন
আমি বলছি না যে সব বড় বড় ব্র্যান্ড ধরেই আমাদের চলা উচিৎ তবে ব্র্যান্ডের ডিভাইস ব্যবহার করলে ডেভেলপার সাপোর্ট কিছুটা হলেও আপনি পাবেন।
ক্যামেরার কথা ভুলে যান
সরাসরিই বলি, সস্তা ট্যাবগুলোতে ক্যামেরা ইউনিট থাকার চাইতে না থাকাই আমার কাছে বরং ভালো মনে হয়। কেননা যে সকল ক্যামেরা ইউনিটগুলো কম মূল্যের ট্যাবগুলোতে ব্যবহার করা হয় সেগুলো দিয়ে ছবি তুলে আপনি কোন আনন্দ পাবেন না। তাই, এর ক্যামেরা আশানুরূপ হবে না ধরেই আপনাকে বাজারে যেতে হবে।
শেষ কথা
কম মূল্যের ডিভাইস মানেই খারাপ ডিভাইস এই ভুল ধারণা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। বর্তমানে কম মূল্যেও বেশ ভালো মানের ট্যাব বাজারে পাওয়া যায়, শুধুমাত্র উপরের বিষয়গুলো মাথায় রাখলেই আপনি ঠকবেন না বা কেনার পর অনুশোচনা হবেনা। যাই হোক, আপনার যদি কোন কম মুল্যের ট্যাব কেনার ইচ্ছে হয়ে থাকে এবং সে সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে অবশ্যই আপনি মন্তব্যের ঘরে লিখে ফেলবেন আপনার প্রশ্নটি। সাধ্যমত সাহায্য করা হবে, কথা দিচ্ছি।
বাজারে কম মূল্যের অনেক অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের ট্যাব রয়েছে যেগুলো রুট করতেও আপনি হিমশিম খাবেন যেখানে ব্র্যান্ডের ডিভাইসের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে সার্চ দিলে শুধুমাত্র রুটিং প্রসেসই নয় বরং এর কাস্টম রমের লিস্টও পেয়ে যেতে পারেন।
No comments:
Post a Comment